হোমিওপ্যাথির দৃষ্টিতে ব্লাড ক্যান্সার: মায়াজম, জীবনধারা, জলবায়ু পরিবর্তন ও Level of Health বিশ্লেষণ সহ পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা/ ডা.ইকবাল জিল্লুল মজিদ
ব্লাড ক্যান্সার হোমিওপ্যাথির ভাষায় কেবল কোষের একটি শারীরিক ব্যতিক্রম নয়, বরং এটি মানুষের গভীর অন্তর্গত শক্তি বা Vital Force এর দীর্ঘমেয়াদী ব্যর্থতা। আধুনিক পৃথিবীর মানসিক চাপ, বিষাক্ত পরিবেশ, অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা ও দুর্বল জিনগত প্রবণতার সঙ্গে মায়াজমিক প্রভাব একত্রিত হয়ে এটি তৈরি করে।
Level of Health – স্বাস্থ্যের স্তর কী ও কেন গুরুত্বপূর্ণ:
এই ধারণাটি প্রস্তাব করেন ড. জর্জ ভিথুলকাস, যিনি হ্যানিম্যানীয় হোমিওপ্যাথিকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। Level of Health ধারণা অনুযায়ী, প্রতিটি রোগীর শরীর ও মনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনুযায়ী তাকে একটি নির্দিষ্ট স্তরে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়, যার ভিত্তিতে চিকিৎসার ফলাফল নির্ধারিত হয়।
স্তরের ধরনসমূহ:
উচ্চ স্তর: রোগী মাঝে মাঝে রোগে আক্রান্ত হয়, তীব্র উপসর্গ থাকে, রোগ বাইরে প্রকাশ পায় (চামড়া, জ্বর), রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো।মধ্যম স্তর: রোগ বারবার হয়, উপসর্গ অস্পষ্ট হতে থাকে, সঠিক ওষুধেও সময় লাগে।নিম্ন স্তর: রোগ গভীরে থাকে, শরীর উপসর্গ প্রকাশ করতে পারে না, ভয়াবহ কোষীয় রূপ নেয় যেমন: ক্যান্সার, অটোইমিউন।চূড়ান্ত স্তর: Vital force প্রায় নিঃশেষ, প্যালিয়েটিভ চিকিৎসাই সম্ভব।
Level of Health বুঝে চিকিৎসা না করলে ভুল সময় ভুল ওষুধ প্রয়োগে গভীর স্তরের রোগকে আরও খারাপ করে ফেলা সম্ভব।
মায়াজমিক বিশ্লেষণ:
স্যাইকোসিস: কোষের অতিবৃদ্ধি, গ্ল্যান্ড ফোলা, লিউকেমিয়ার রূপ
সিফিলিসিস: কোষ ধ্বংস, হাড়ের ক্ষয়, মাল্টিপল মাইলোমা
সোরা: বারবার সংক্রমণ, প্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতা
ওষুধ: Sulphur, Syphilinum, Thuja, Medorrhinum, Psorinum
জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত প্রভাব : অতিরিক্ত গরম বা আর্দ্রতা → শরীরের প্রতিক্রিয়া পরিবর্তন করে।পরিবেশদূষণ, কেমিক্যাল, কীটনাশক → ক্যান্সার কোষ সৃষ্টির অনুঘটক। ইলেকট্রনিক রশ্মি → কোষীয় ডিএনএ বিকৃতি।হোমিওপ্যাথিতে ব্যবহৃত ওষুধ: Dulcamara, Natrum Mur, Rhus Tox।
আধুনিক জীবনধারা ও মানসিক চাপ: মানসিক ট্রমা, বিরহ, মৃত্যুভীতি → Carcinosin, Ignatia, Natrum Mur। অনিদ্রা, ক্লান্তি → Kali Phos, Phosphoric Acid।শিশুদের প্রযুক্তি আসক্তি, বিষন্নতা → Baryta Carb, Medorrhinum।স্তরভিত্তিক চিকিৎসা প্রয়োগ (Level-wise approach)।উচ্চ স্তরের রোগী (যাদের সিম্পটমস স্পষ্ট, রোগবিরোধী শক্তি ভালো)।Carcinosin, Phosphorus, Ferrum Phos।লক্ষণ অনুযায়ী অল্প পটেন্সি বা একক ডোজ যথেষ্ট।মধ্য স্তর (লক্ষণ অস্পষ্ট, বারবার সংক্রমণ, ক্লান্তি)।Sulphur, Lycopodium, Kali Carb।ধাপে ধাপে পুনরাবৃত্ত ওষুধ প্রয়োগ প্রয়োজন।নিম্ন স্তর বা গভীর ক্যান্সার (Vital Force দুর্বল)। Syphilinum, Scirrhinum, Radium Bromatum
নিয়মিত প্যালিয়েটিভ কেয়ার, খাদ্য, মানসিক শান্তি
সহায়ক ব্যবস্থাপনা: মানসিক সাপোর্ট: চিকিৎসার অংশ হিসেবেই গণ্য।Proper Diet: প্রাকৃতিক, রাসায়নিক মুক্ত খাদ্য।সঠিক বিশ্রাম ও শ্বাস প্রশ্বাস চর্চা: প্রয়োজনে মেডিকেল থেরাপি সমান্তরাল (ইন্টিগ্রেটিভ থেরাপি)।বিশেষ ঔষধের তালিকা (দুর্লভ ও প্রমাণিত)।Cadmium Sulph: কেমোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে।Ceanothus: স্প্লিন/লিভার ফোলা।Hydrastis: কোষীয় দুর্বলতা, রক্তক্ষরণ।Scirrhinum: ক্যান্সারের গভীর মায়াজমিক ওষুধ।
পরিশেষে Level of Health এর ধারণা যুক্ত করে হোমিওপ্যাথি আজ এক বৈজ্ঞানিক ও গভীর অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন চিকিৎসাপদ্ধতি। ব্লাড ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে কেবল রোগ নয়, রোগীকে ঘিরে তার মন, পরিবেশ, জীবনধারা, সামাজিক পটভূমি বিশ্লেষণ করে চিকিৎসা করাই হোমিওপ্যাথির সত্য শক্তি। উপরের ঔষধগুলো সম্ভাব্য। চিকিৎসক / চিকিৎসক বৃন্দ কেইস লিখে ঔষধ পরিবর্তন করতে পারবেন। (সূত্র: ইন্টারনেট)
ডা.ইকবাল জিল্লুল মজিদ(হোমও), পরিচালক - কমিউনিটি হেলথ, রাডডা এমসিএইচ এফপি সেনটার, মিরপুর, ঢাকা
cell: 01912446730
সংগ্রহ - আমির হোসেন