গোপালগঞ্জে সহিংসতা: সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, কারফিউ জারি, আইএসপিআরের বিবৃতি
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ঘোষিত 'জুলাই পদযাত্রা' কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে দফায় দফায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জেলায় কারফিউ জারি করেছে। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যা বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেলে তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়।
সেনাবাহিনীর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ১৬ জুলাই ২০২৫ তারিখে গোপালগঞ্জ জেলায় একটি রাজনৈতিক দলের জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা সংঘবদ্ধভাবে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। এই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিক আহত হন। এছাড়াও, শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সরকারি যানবাহনে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও স্থানীয় পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করে এবং প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে, উক্ত রাজনৈতিক সংগঠনের সমাবেশ চলাকালে মঞ্চে পুনরায় হামলা চালানো হয় এবং একই সাথে জেলা কারাগারে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়।
সেনাবাহিনী হামলাকারীদের মাইকে বারবার ঘোষণা দিয়ে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও তারা সেনাবাহিনীর ওপর বিপুল সংখ্যক ককটেল ও ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা করে। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ যৌথভাবে বিশৃঙ্খলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর, সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পুলিশ সুপারের কার্যালয়, গোপালগঞ্জ-এ আশ্রয় গ্রহণকারী ব্যক্তিবর্গকে খুলনায় স্থানান্তর করা হয়। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পেশাদারিত্ব ও ধৈর্যের সাথে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে।
বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলায় সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং প্রশাসন কর্তৃক জারীকৃত কারফিউ চলমান রয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যার এবং প্রশাসনের অন্যান্য সংস্থাগুলো ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় রেখে কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল সকাল থেকে চলমান এই রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলায় গোপালগঞ্জ জেলার জনসাধারণ অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে নিজেদের নিবৃত্ত রেখে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছেন। গুজব বা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে ধৈর্য ধারণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব ও জননিরাপত্তা রক্ষায় সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
হাসান মাহমুদ -ডেস্ক রিপোর্ট