1. dailyrodrodipto@gmail.com : রৌদ্রদীপ্ত : রৌদ্রদীপ্ত
  2. info@www.newsbddailyrodrodipto.online : রৌদ্রদীপ্ত :
বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:১৪ পূর্বাহ্ন

লাইসেন্সের দখলে রাষ্ট্র:ক্ষমতার ছত্রছায়ায় জনগণের অধিকার হরণের দীর্ঘ ইতিহাস

  • প্রকাশিত: শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫
  • ৬১ বার পড়া হয়েছে

“লাইসেন্সের দখলে রাষ্ট্র: ক্ষমতার ছত্রছায়ায় জনগণের অধিকার হরণের দীর্ঘ ইতিহাস”

স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রের কাঠামো গঠনে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা চালু হয়েছিল একটি উদ্দেশ্য নিয়ে—শৃঙ্খলা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও রাষ্ট্রের সীমিত সম্পদ ন্যায্যভাবে বিতরণের মাধ্যমে একটি স্বনির্ভর জাতি গড়ে তোলা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই লাইসেন্স ব্যবস্থা ধীরে ধীরে একটি শ্রেণির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ে, যা এক ধরনের “নতুন অভিজাত শ্রেণির” জন্ম দেয়। এই শ্রেণি রাজনৈতিক নেতা, উচ্চপদস্থ আমলা, ব্যবসায়ী এবং তাদের ঘনিষ্ঠদের সমন্বয়ে গঠিত।

লাইসেন্সের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হতো ব্যবসা, শিল্প, আমদানি-রপ্তানি, পেশাজীবী সংগঠন এমনকি সংবাদপত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত। শুরুতে এর লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষা, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হতে থাকে একচেটিয়া লাভ, প্রভাব বিস্তার এবং দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ জনগণ—যাদের মৌলিক অধিকার পাওয়ার কথা ছিল বিনা বাধায়।

ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন: লাইসেন্সকে ঘিরে চক্রবৃত্তি

এই লাইসেন্স ভিত্তিক ক্ষমতার চক্রে যাঁরা প্রবেশ করতে পেরেছেন, তাঁদের জন্য রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে সম্পদ আহরণের উৎস। অন্যদিকে, যারা সেই চক্রের বাইরে, তাদের জন্য রাষ্ট্র রয়ে গেছে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার এক অনুন্নয়নশীল মঞ্চ। লাইসেন্স পাওয়ার জন্য রাজনৈতিক আনুগত্য, ঘুষ, দলীয় পরিচয়—এসব বিষয় হয়ে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড। মেধা, সততা, বা জনকল্যাণের চিন্তা সেখানে প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শুধু শীর্ষে থাকা ব্যক্তিবর্গ বদলেছে, কিন্তু লাইসেন্সের সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর চরিত্র বদলায়নি। বরং, প্রতিটি সরকার এসে তাদের নিজস্ব বলয়ের লোকদের লাইসেন্স ও সুযোগ সুবিধা দিয়ে একে আরও শক্তিশালী করেছে। এতে রাষ্ট্রের সম্পদ ও সুযোগ বৈষম্য আরো তীব্র হয়েছে, তৈরি হয়েছে ধনী-দরিদ্রের গভীর ব্যবধান।

আমলাতন্ত্রের ছদ্ম ভূমিকা

এই ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যদিও তারা জনপ্রতিনিধি নয়, তথাপি বাস্তবিক অর্থে অনেক নীতিনির্ধারণী ক্ষমতা তাদের হাতে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে আঁতাত করে তারা লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের প্রভাব বাড়িয়ে তোলে। ফলে, নীতিনির্ধারণ হয় জনগণের স্বার্থের ভিত্তিতে নয়, বরং কে কতটা প্রভাবশালী বা ঘনিষ্ঠ তার ভিত্তিতে।

জাতিকে প্রশ্ন করতে হবে: এই ব্যবস্থার শেষ কোথায়?

রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা—শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, জীবিকার সুযোগ ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন। কিন্তু গত ৫৫ বছরে আমরা দেখেছি এই লাইসেন্স-নির্ভর ব্যবস্থা কেবল কিছু গোষ্ঠীর সম্পদ বৃদ্ধির পথ সুগম করেছে, সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এর অবদান খুবই সীমিত।

আজ প্রশ্ন উঠেছে—কেন রাষ্ট্র ব্যবস্থার মূল নিয়ন্ত্রণে এমন এক গোষ্ঠী থাকবে, যারা লাইসেন্স নামক বৈধ অস্ত্র দিয়ে পুরো দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করবে?

সমাধানের পথ কী হতে পারে?

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া: সবধরনের লাইসেন্স বিতরণে ডিজিটাল পদ্ধতি ও উন্মুক্ত যাচাইব্যবস্থা চালু করা।

রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত আমলাতন্ত্র: আমলাতন্ত্রে নিয়োগ, পদোন্নতি ও দায়িত্ব বণ্টনে মেধা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা: গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকে সক্রিয়ভাবে এসব অনিয়ম পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবাদে যুক্ত করা।

জনগণের অংশগ্রহণ: যে কোনো নীতি বা লাইসেন্স নীতিমালায় জনমত ও বিশেষজ্ঞ মতামতের গুরুত্ব বাড়ানো।
এই বাস্তবতা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, “লাইসেন্স” কেবল একটি প্রশাসনিক অনুমতি নয়—এটি রাষ্ট্র ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রতীক। আর এই ক্ষমতা যদি সুষ্ঠুভাবে ব্যবহৃত না হয়, তবে তা জনগণের অধিকার হরণের বৈধ অস্ত্র হয়ে উঠতে বাধ্য।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট