1. dailyrodrodipto@gmail.com : রৌদ্রদীপ্ত : রৌদ্রদীপ্ত
  2. info@www.newsbddailyrodrodipto.online : রৌদ্রদীপ্ত :
বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ: অপচয়

  • প্রকাশিত: সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫
  • ৮৪ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ: অপচয়

ইকবাল জিল্লুল মজিদ
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, পরিচালক, কমিউনিটি হেলথ প্রোগ্রাম, রাডডা এমসিএইচ-এফপি সেন্টার

ভূমিকা

বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। তবে এই অগ্রযাত্রার আড়ালে এক বিষণ্ন বাস্তবতা ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে — সেটি হলো অপচয়। খাদ্য, জ্বালানি, পানি, সময় এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় আমাদের স্বপ্নের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার পথে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অপচয় শুধু সম্পদের অপব্যবহার নয়, এটি দায়িত্বহীনতা, দুর্নীতি এবং সমাজের এক প্রকার মানসিক দৈন্যতার প্রকাশ।

অপচয়ের বিস্তার ও চিত্র

খাদ্য অপচয় বাংলাদেশের সবচেয়ে গভীর ও নীরব অপচয়গুলোর একটি। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (BARC)-এর যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে এক কোটি একুশ লাখ টন খাদ্য অপচয় হয়। উৎপাদন, পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও ভোক্তা পর্যায়ে প্রতিটি ধাপে ব্যাপক অপচয় ঘটছে। সামাজিক অনুষ্ঠানে খাবারের অপব্যবহার তো রীতিমতো নিয়মে পরিণত হয়েছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির অপচয় বাংলাদেশের মতো বিদ্যুৎ সংকটাপন্ন দেশের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। অকারণে বাতি জ্বালিয়ে রাখা, এসি চালু রেখে রুম ফাঁকা রাখা, সরকারি অফিসে দায়িত্বহীন ব্যবহার—এসব মিলিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ নষ্ট হচ্ছে, যার আর্থিক মূল্য কোটি কোটি টাকায় পরিণত হয়।

পানির অপচয় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। সুপেয় পানির প্রাপ্যতা যেখানে প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে, সেখানে দৈনন্দিন জীবনে অসচেতনতাবশত হাজার হাজার লিটার পানি নষ্ট হচ্ছে। ট্যাংক উপচে পড়া, খোলা কল রেখে কাজ করা, অকারণে গাড়ি ধোয়ার মতো অভ্যাস এখনও ব্যাপকভাবে প্রচলিত।

সময় অপচয়ও বাংলাদেশে একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। যানজট, প্রশাসনিক জটিলতা, অকারণ দেরি, ও দায়হীন কাজের সংস্কৃতি দেশের উৎপাদনশীলতা হ্রাস করছে। ঢাকাবাসী যানজটে বছরে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ দিন সময় অপচয় করে, যা ব্যক্তিগত ও জাতীয় উৎপাদনের ক্ষতি ডেকে আনে।

রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় সবচেয়ে দৃষ্টিকটূ। বাজেট বরাদ্দ না খরচ করে ফেরত দেওয়া, প্রকল্প বিলম্বে শেষ হওয়া, দুর্বল নির্মাণ মান, ঘন ঘন টেন্ডার সংশোধন—এসব আমাদের উন্নয়নের গতিকে ধীর করে দিচ্ছে। অনেক সময় উন্নয়নের নামে অর্থ বরাদ্দ হয়, কিন্তু কাজ হয় না বললেই চলে।

শিক্ষা খাতে অপচয়ও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অনুপস্থিত শিক্ষক, পাঠদানবিহীন ক্লাস, ব্যবহারের অযোগ্য ডিজিটাল সরঞ্জাম, বা ভুলবশত মুদ্রিত পাঠ্যবই—সব মিলে মানবসম্পদ তৈরির পথে বড় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

অপচয়ের ফলাফল

এই অপচয়ের সম্মিলিত প্রভাব অর্থনীতি, পরিবেশ এবং সমাজে এক গভীর নেতিবাচক ছাপ রেখে যাচ্ছে। একদিকে খাদ্য অপচয়, অন্যদিকে পুষ্টিহীন শিশু। একদিকে বিদ্যুৎ অপচয়, অন্যদিকে হাজারো পরিবার অন্ধকারে। অপচয় ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বাড়ায়, পরিবেশ দূষণ বাড়ায়, এবং একটি দুর্নীতিপ্রবণ মনস্তত্ত্ব তৈরি করে সমাজে।

রাষ্ট্রীয় প্রকল্পে অপচয়ের ফলে জনগণের করের টাকার অপচয় হয়, অথচ জনগণেরই প্রাপ্য সেবা ও সুযোগ সংকুচিত হয়। অপচয় টেকসই উন্নয়নের পথকে রুদ্ধ করে দেয়।

করণীয়
এই সমস্যা সমাধানে আমাদের প্রয়োজন তিনটি স্তরে কাজ:

১. ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
২. রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. শিক্ষা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে মিতব্যয়ী মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা স্তর থেকেই শিশুদের শেখাতে হবে—খাবার নষ্ট করা লজ্জার, পানি অপচয় অপরাধের, সময় নষ্ট করা জীবনের অপচয়। সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে অপচয়রোধে নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে। সরকারি প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালী নজরদারি, নিরীক্ষা এবং প্রযুক্তি ব্যবহার জরুরি।

উপসংহার
অপচয় একক কোনো সমস্যা নয়, এটি একটি চিন্তাধারার ব্যর্থতা। আমরা যদি এই প্রবণতা রোধ করতে না পারি, তবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, দারিদ্র্য দূরীকরণ কিংবা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’—সবই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।

আমাদের প্রয়োজন অপচয় রোধে একটি জাতীয় ঐক্য। একজন ব্যক্তি, একটি পরিবার, একটি প্রতিষ্ঠান সচেতন হলে সমাজ বদলাতে সময় লাগবে না। উন্নয়নের মূলে যদি থাকে মিতব্যয়িতা, তবে বাংলাদেশ এগোবে আরও অনেক দূর।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট