উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত:
এই ঘটনা শুধু শিশুদের মৃত্যু নয়, বরং এক বিশাল দায়িত্বহীনতা, অব্যবস্থাপনা ও অমানবিক সিদ্ধান্তের পরিণতি। ফাইটার বিমান যে পুরানো, তা চলানো স্রেফ একটি ভয়াবহ ভুল, কিন্তু সরকার কেন এটি কিনলো, কেন দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি আগে থেকে না দেখে, তা এক বড় প্রশ্ন।
প্রথমত, যিনি সেই বিমানটি চালাচ্ছিলেন, তার জীবনও যে বিপন্ন হয়ে পড়েছিল—এটা একটি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। একটি পুরানো, অপ্রতুল রক্ষণাবেক্ষণ করা বিমান যখন আকাশে উড়ছে, তখন সেই পাইলটের জীবন তো খেলার কিছু নয়। যিনি এই বিমানের পেছনে আছেন, তারও প্রাণের ঝুঁকি ছিল। যদি বিমানের সিস্টেমের কোনো ত্রুটি ঘটতো, যদি কোনো প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দিতো, তখন শুধু বিমান চালানোর জন্য পাইলটের জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়তো। তার চেয়েও ভয়ঙ্কর, এমন পরিস্থিতিতে স্কুলের কাছাকাছি একটি বিমান উড়তে থাকা—এটা তো একেবারেই অর্থহীন। শহরের মাঝখানে, যেখানে এতগুলো নিরীহ শিশু শিক্ষালাভ করছে, সেখানে বিমানের উড়ান কতটা অত্যন্ত অমানবিক, তা বলা বাহুল্য।
যতটা পুরানো, ততই ঝুঁকি বাড়ে। এত পুরানো বিমান কেন কিনতে দেওয়া হলো? কেন একটি যুদ্ধবিমান, যেটি আর কার্যকরী হতে পারছে না, তাও সরকার ব্যবহারের অনুমতি দিলো? সরকার স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কেবল দেশের নাগরিকদের জন্যই নয়, বরং বিশ্বমানের প্রযুক্তি ও বাহন নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি গুরুতর দায়িত্ব পালন করার জন্যও। এত পুরানো একটি বিমানের ব্যবহার শুধু এক দুর্ঘটনা নয়, বরং একটি ঘৃণ্য উপেক্ষা, যেখানে সরকারের কর্তৃপক্ষ এই ঝুঁকি নির্ধারণ করে, কিন্তু পরে কিছুই করে না।
আর, অকাল মৃত্যুর কারণ—এটা তো একেবারে অন্য একটি ভয়াবহ বিষয়। এতগুলো শিশুর জীবন কেড়ে নিলো একটি অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা। অকাল মৃত্যু, সেটা যারাই হয়েছে, তাদের পরিবারকে অন্তহীন যন্ত্রণায় ফেলে। কিন্তু একথা ভাবুন—এমনকি মৃত্যু ঘটার পরও, যখন মানুষ চিৎকার করে, তখন সরকার কি পদক্ষেপ নেবে? এতগুলো প্রাণ হারানোর পর কি কোনও প্রশাসনিক পরিকল্পনা বা পরিণতি আসে? না, বরং শুধু শোক ও নিন্দার শব্দ ছাড়া কিছুই আসে না।
সরকারের উচিত ছিল, ফাইটার বিমান কেনার প্রক্রিয়ায় একটি সুনির্দিষ্ট বিশ্লেষণ করা, সেই বিমানটির টেকনিক্যাল অবস্থা নিশ্চিত করা, এবং তা নিরাপদ কিনা তা পরীক্ষা করা। কিন্তু তারা না শুধুমাত্র এই বিষয়গুলোর প্রতি উদাসীন থেকেছে, বরং এমন সরঞ্জাম কেনার অনুমতি দিয়েছে যেগুলো জাতীয় নিরাপত্তা বা মানবিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, যখন এমন দুর্ঘটনা ঘটে, তখন সরকারের দায়িত্ব কি শুধুমাত্র শোক প্রকাশ করা এবং জনগণের কাছে মিথ্যা আশ্বাস দেয়া? এতগুলো অমূলক মৃত্যু ঘটানোর পর প্রশাসন কেন কোন ব্যবস্থা নেয় না? সরকার কী মনে করে, শুধু চিৎকারের মধ্যে মৃত্যুটা চাপা পড়বে?
সবশেষে, এটি একটি চরম অবহেলা, একটি সাংস্কৃতিক ব্যর্থতা, যেখানে সরকারের দায়িত্ব শুধুমাত্র নিন্দা করার এবং শোক পালন এর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়, কিন্তু মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করা এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া যেন কোন এক অলীক চিন্তা হয়ে দাঁড়ায়। এটা আর চলতে পারে না, মানুষের জীবনকে এভাবে রাজনৈতিক ও সামরিক স্বার্থের খেলা বানানো চলে না।
ইকবাল জিল্লুল মজিদ
স্বেচ্ছাসেবী ব্যক্তিত্ব, ঢাকা