খুলনা জেলার সুন্দরবনাঞ্চলসংলগ্ন কয়রা উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মাহাতোদের বসবাস। কয়রা উপজেলার গীতার ঘেরী, হরিহরপুর গ্রামসহ অন্যান্য এলাকায় মাহাতোদের ঘনবসতি লক্ষ্য করা যায়। দলবদ্ধভাবে বসবাস করা এ গোষ্ঠীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
সুন্দরবনাঞ্চলে বসবাসকারী মাহাতোদের দেহের গঠন আদিম মঙ্গোলয়েড জাতিগোষ্ঠীর মতো। তাদের গায়ের রং কালো, নাক চ্যাপ্টা ও মোটা এবং মুখে থাকে অল্প দাড়ি ও গোঁফ। চুলের রং সাধারণত কালো। মাহাতো পুরুষ ও নারী উভয়েই অধিক পরিশ্রমী।
তারা মূলত দেবনাগরি বর্ণমালাভিত্তিক এক ধরনের নিজস্ব ভাষায় কথা বলে। এই ভাষা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও বর্তমানে তারা দ্বিভাষিক। নিজেদের মধ্যে তারা নিজস্ব ভাষায় কথা বলে, আর প্রতিবেশী বাঙালিদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহার করে। যদিও এখন এ অঞ্চলে কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে, তথাপি তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই।
মাহাতোদের অর্থনৈতিক জীবন প্রধানত কৃষিনির্ভর। তবে বর্তমানে তারা খাল থেকে বাগদা চিংড়ি আহরণ এবং সমুদ্রে মাছ ধরার কাজেও নিয়োজিত। এছাড়া বন থেকে কাঠ সংগ্রহের কাজও তারা করে থাকে। পুরুষেরা সাধারণত লুঙ্গি, ধুতি ও পাঞ্জাবি পরিধান করে, আর নারীরা বর্তমানে বাঙালি নারীদের মতো শাড়ি পরেন। অতীতে মাহাতো নারীরা দুই খণ্ড কাপড় পরিধান করতেন।
ধর্মীয় বিশ্বাসে মাহাতোরা প্রকৃতিপূজারী। অতীতে তাদের নিজস্ব ধর্ম থাকলেও বর্তমানে তারা হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান যেমন—দুর্গাপূজা, কালীপূজায় অংশগ্রহণ করে। এছাড়া তারা বর্ষবরণ, বর্ষবিদায় ও নবান্ন উপলক্ষে উৎসব পালন করে থাকে।