1. dailyrodrodipto@gmail.com : রৌদ্রদীপ্ত : রৌদ্রদীপ্ত
  2. info@www.newsbddailyrodrodipto.online : রৌদ্রদীপ্ত :
বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৫৫ পূর্বাহ্ন

বিভ্রান্তি

  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫
  • ৪১ বার পড়া হয়েছে

 

বিভ্রান্তি

লেখক: ইকবাল জিল্লুল মজিদ
পরিচালক, কমিউনিটি হেলথ প্রোগ্রাম, রাডডা এমসিএইচ-এফপি সেন্টার

“ব্যাংকে টাকা রাখলে নিরাপদ”—এই বিশ্বাসেই যুগ যুগ ধরে সাধারণ মানুষ তাদের শ্রমে-ঘামে অর্জিত টাকা ব্যাংকে জমা রাখে। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থিক খাতের বর্তমান চিত্র এই বিশ্বাসকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনা, নন-ব্যাংকিং লিজিং কোম্পানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্প—সব জায়গায় যেন ছড়িয়ে আছে এক অনিশ্চয়তার ঘূর্ণিপাক। আর এই বিভ্রান্তি ও নিরাপত্তাহীনতা কেবল অর্থনৈতিক নয়, একেকজন মানুষকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলছে।

যেখানে শুরু হয়েছিল আস্থা, এখন সেখানে অবিশ্বাস

স্বাধীনতার পর ব্যাংকিং খাতকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে এনে আর্থিক খাতের ভিত গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু আশির দশক থেকে শুরু করে লুটপাট, রাজনৈতিক প্রভাব, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং নজরদারির অভাবে ধীরে ধীরে এই খাত হয়ে ওঠে অকার্যকর ও জনবিচ্ছিন্ন। বেসরকারি ব্যাংকের প্রসার ঘটলেও অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো হয়ে পড়ে রাজনৈতিক হাতিয়ার ও কর্পোরেট সুবিধাভোগীদের প্রভাবিত আখড়া।

লিজিং কোম্পানিগুলোর অবস্থাও তারচেয়ে ভালো কিছু নয়। ‘পিপলস লিজিং’, ‘ইন্টারন্যাশনাল লিজিং’ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে সাধারণ মানুষ তাদের সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করেছিল মূলধন বৃদ্ধির আশায়। আজ তারা জানে না—তাদের টাকা কোথায়, আর কবে বা আদৌ ফেরত পাবে কিনা। আদালতের দারস্থ হয়েও মিলছে না সমাধান। এ যেন অর্থনৈতিক ‘ব্ল্যাকহোল’—যেখানে টাকা ঢোকে, কিন্তু আর বেরোয় না।

রাষ্ট্র ও সরকারের নিষ্ক্রিয়তা: দায় কার?

প্রশ্ন জাগে—রাষ্ট্র কেন এই অর্থ পাচার, জালিয়াতি ও ধ্বংসাত্মক ব্যবস্থাপনার লাগাম টানতে ব্যর্থ? এখানে একদিকে যেমন রয়েছে দুর্নীতির মহীরুহ, তেমনি রয়েছে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক ক্ষেত্রেই জড়িত উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক গোষ্ঠী, যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে প্রশাসনও পড়ে চাপে।

বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, অর্থ মন্ত্রণালয় কিংবা বিচার বিভাগ—সব জায়গায় বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ দেখা গেলেও সমন্বিত প্রয়াস ও রাজনৈতিক শক্তি প্রয়োগের বাস্তব প্রয়োগ দেখা যায় না। প্রতারণা প্রমাণিত হলেও টাকা উদ্ধারে কার্যকর কাঠামো নেই বললেই চলে।

বর্তমান অবস্থা: এক নিঃশব্দ হাহাকার

আজ এমন বহু প্রবীণ নাগরিক আছেন, যাঁরা জীবনের শেষ সঞ্চয় তুলে দিয়েছিলেন একটি ‘নিরাপদ’ লিজিং কোম্পানিতে। কেউ কেউ তাঁদের সন্তানদের বিয়ের জন্য, চিকিৎসার জন্য কিংবা শেষ বয়সে একটু নিশ্চিন্ত জীবনের আশায় টাকা রেখেছিলেন। এখন তাঁরা প্রতি সকালে কাগজে চোখ বুলিয়ে শুধু একটাই খবর খোঁজেন—“আমার টাকা ফেরত পাবো তো?”
এ যেন এক অর্থনৈতিক বেদনার কাহিনি, যেখানে ন্যায্য পাওনা আদায়ে মানুষকে বছরের পর বছর আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হয়। অথচ বড় ঋণখেলাপিরা বিদেশে বিলাসিতায় জীবন কাটায়। রাষ্ট্র সেই অর্থ ফিরিয়ে আনার কাঠামো গড়তেই পারেনি।

পথ কী? সমাধান কোথায়?

১. আর্থিক অপরাধ দমন ট্রাইবুনাল অবিলম্বে সক্রিয় করতে হবে এবং এসব প্রতারণার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
২. বেইল-আউট নয়, দায়বদ্ধতা ও শাস্তি—এই নীতি নিতে হবে। যারা টাকা নিয়ে খেলেছে, তাদের দায়ে জব্দ করতে হবে ব্যক্তিগত সম্পত্তিও।
৩. বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও শক্তিশালী মনিটরিং ইউনিট গঠন করতে হবে, যাতে রাজনৈতিক চাপ থেকে মুক্ত হয়ে আর্থিক খাতে নজরদারি বাড়ানো যায়।
৪. ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠন করা উচিত, যেখানে সরকার প্রাথমিকভাবে অর্থ জোগান দিয়ে পরবর্তীতে অভিযুক্তদের কাছ থেকে তা আদায় করবে।
৫. অর্থনৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ সম্পর্কে সচেতন হয়।

শেষ কথা: বিভ্রান্তি নয়, দায়িত্ব ও ন্যায়বিচার চাই

আজ আমাদের দেশের হাজারো মানুষ শুধুমাত্র রাষ্ট্রের দুর্বলতা, দুর্নীতির স্বার্থান্ধতা এবং রাজনৈতিক সুবিধাভোগীদের কারণে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। তাঁরা বিভ্রান্ত, হতাশ, আহত। কিন্তু তাদের দোষ কী? তারা শুধু চেয়েছিল সঞ্চয়ের নিরাপত্তা।

এখন সময় হয়েছে—এই বিভ্রান্তির অবসান ঘটিয়ে রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট