1. dailyrodrodipto@gmail.com : রৌদ্রদীপ্ত : রৌদ্রদীপ্ত
  2. info@www.newsbddailyrodrodipto.online : রৌদ্রদীপ্ত :
বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৫৫ পূর্বাহ্ন

বাস্তবতাকে গ্রহণেই শান্তি

  • প্রকাশিত: বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫
  • ১০৩ বার পড়া হয়েছে

 

বাস্তবতাকে গ্রহণেই শান্তি:

ইকবাল জিল্লুল মজিদ
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, পরিচালক, কমিউনিটি হেলথ প্রোগ্রাম, রাডডা এমসিএইচ-এফপি সেন্টার

মানবজীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই নানা চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ। জীবনের স্বাভাবিক ধারার মধ্যেই রয়েছে পরিবর্তন, প্রতিযোগিতা, আকাঙ্ক্ষা, ব্যর্থতা, অপ্রাপ্তি এবং সংঘাত। এসব বাস্তবতা যখন আমাদের প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়ায়, তখনই মনোজগতে সৃষ্টি হয় হতাশা বা অবসাদ। কিন্তু এই হতাশা, যা অনেক সময় বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশনের রূপ নেয়, তার মূল শিকড় কোথায়?

অনেক মনোবিজ্ঞানী ও দার্শনিকের মতে, ডিপ্রেশন বা অবসাদ আসলে বাস্তবতাকে মেনে নিতে না পারার ফলাফল। আমরা যখন কোনো কষ্টকর সত্যকে অস্বীকার করি, আমাদের অন্তর্জগত তখন বিরোধিতায় জর্জরিত হয়। ফলে মনের মধ্যে জন্ম নেয় অস্থিরতা, ক্লান্তি, আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং কখনো কখনো জীবনের প্রতি নিরাশা।

বাস্তবতা মানেই কি কষ্ট?

বাস্তবতা সবসময়ই সুখকর হয় না, এটা সত্য। কিন্তু বাস্তবতাকে অস্বীকার করে আমরা সেটিকে বদলাতে পারি না। বরং বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়েই আমরা নিজের ভেতরে কেবল ক্ষয় ডেকে আনি। বাস্তবতা হলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গড়ে ওঠা নিরপেক্ষ সত্য—যার বিরুদ্ধে লড়াই করে জেতার কোনো পথ নেই। তবে একে মেনে নেওয়া গেলে সেই সত্যই হয়ে ওঠে জীবনের চালক শক্তি।

যা আছে তা আছে, তাই নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। এই মানসিকতা যত দ্রুত গড়ে তোলা যায়, ততই জীবনে শান্তি ও ভারসাম্য ফিরে আসে। এটি আত্ম-অনুশীলনের বিষয়, এবং মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি।

অস্বীকার বনাম গ্রহণযোগ্যতা: মনের যুদ্ধ

আমরা অনেক সময় এমন কিছু চাই যা হয়তো প্রাপ্য নয়, অথবা সময়ের প্রেক্ষিতে অসম্ভব। যখন সেই চাওয়া পূরণ হয় না, তখন আমরা মনে করি জীবন ব্যর্থ। এই ‘চাওয়া-পাওয়া’র সংঘাতে তৈরি হয় মানসিক চাপ। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন দেখা দেয়—আমরা কি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারি?

উত্তর হলো না। জীবনের অনেক কিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাই চেষ্টার পর যখন কাঙ্ক্ষিত ফল আসে না, তখন সেটা মেনে নেওয়া হলো পরিপক্বতার লক্ষণ। বাস্তবতা মেনে নেওয়া মানে হাল ছেড়ে দেওয়া নয়, বরং এটা হলো আত্মার শান্তির জন্য একটি জ্ঞানের ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত।

স্ট্রেস ও অবসাদ: আধুনিক জীবনের ছায়া

বর্তমান সময়ের দ্রুতগতির জীবনে মানুষ একদিকে প্রতিযোগিতার চাপে, অন্যদিকে সামাজিক ও পারিবারিক প্রত্যাশার বোঝায় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্যের সাফল্য দেখে নিজেকে হীনমন্য মনে হওয়া, কর্মস্থলে চাপ, সম্পর্কের জটিলতা—এসবই ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতা তৈরি করে।

কিন্তু মনে রাখতে হবে, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ একটি স্বাভাবিক মানবিক প্রতিক্রিয়া। এটি একেবারে দূর করা সম্ভব নয়। বরং এটিকে কীভাবে সামাল দিতে হয়, সেই দক্ষতা গড়ে তোলা দরকার। যারা চাপকে মোকাবিলা করতে শেখে, তারা জীবনের প্রতিকূল সময়েও ধৈর্য ধরে এগিয়ে যেতে পারে।

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: কৌশল ও প্রয়োগ

স্ট্রেস কমানোর বা নিয়ন্ত্রণে রাখার কিছু কার্যকর কৌশল নিচে দেওয়া হলো:

১. বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে প্রত্যাশা তৈরি করা
– সবসময় উচ্চাকাঙ্ক্ষা নয়, বাস্তবতা অনুযায়ী লক্ষ্য নির্ধারণ করাই শান্তির জন্য জরুরি।

২. নিয়মিত আত্মমূল্যায়ন করা
– নিজের শক্তি ও দুর্বলতা জানা থাকলে হতাশার ঝুঁকি কমে।

৩. জীবনের প্রতিটি পরিস্থিতিকে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখা
– ব্যর্থতাও একটি শিক্ষা। এটি আমাদের পরিণত করে।

৪. যোগব্যায়াম ও ধ্যানচর্চা
– মানসিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ ও ধ্যান অত্যন্ত কার্যকর।

৫. সহানুভূতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখা
– পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও সহকর্মীদের সহানুভূতি একজনকে মানসিকভাবে দৃঢ় রাখে।

৬. প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া
– অনেক সময় পেশাদার মানসিক চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়াই হয় সঠিক সিদ্ধান্ত।

ধর্ম ও আত্মিক অনুশীলনের ভূমিকা

প্রত্যেক ধর্মেই ধৈর্য, ত্যাগ ও বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। নামাজ, প্রার্থনা, কোরআন পাঠ, ধ্যান বা যোগচর্চা—এসব আত্মিক অনুশীলন আমাদের মনে স্বস্তি এনে দেয়, জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে। যখন একজন ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে সবকিছুর পেছনে একটি বৃহত্তর পরিকল্পনা রয়েছে, তখন তার মধ্যে এক ধরনের আস্থা জন্ম নেয়, যা অবসাদ প্রতিরোধে সহায়ক।

পরিশেষে
জীবনের প্রতিটি সমস্যাই অতিক্রম করা সম্ভব, যদি আমরা বাস্তবতাকে অস্বীকার না করি। চাপ দূর করতে চাইলে চাপকে বোঝা ও নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চাইলে জীবনকে যেমন আছে তেমনই গ্রহণ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

অভিমান নয়, গ্রহণযোগ্যতা। হতাশা নয়, প্রতিকূলতা থেকে শিক্ষা। এটাই শান্তির পথ।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট