1. dailyrodrodipto@gmail.com : রৌদ্রদীপ্ত : রৌদ্রদীপ্ত
  2. info@www.newsbddailyrodrodipto.online : রৌদ্রদীপ্ত :
বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৫৫ পূর্বাহ্ন

এস. এম. সুলতানের জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদন

  • প্রকাশিত: সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

এস. এম. সুলতান: তুলির টানে বাংলার প্রাণ

হাসান মাহমুদ

বাংলাদেশের শিল্প-আকাশে উজ্জ্বলতম নক্ষত্রদের মধ্যে অন্যতম এস. এম. সুলতান। ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া এই কিংবদন্তি শিল্পী ছিলেন একাধারে স্বপ্নদ্রষ্টা, বিদ্রোহী ও নিভৃতচারী। তাঁর তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠেছে বাংলার কৃষক, প্রকৃতি ও গ্রামীণ জীবনের শক্তি, শ্রম এবং সৌন্দর্য।

শৈশব ও শিক্ষার হাতেখড়ি

শৈশবে পড়াশোনায় খুব মনোযোগী না হলেও আঁকার প্রতি তাঁর ছিল অসীম টান। গ্রামের মাটির ঘরে, নদীর তীরে, ক্ষেতের ধারে—যেখানে সুযোগ মিলেছে, সেখানেই কাগজ-কলম বা কাঠের টুকরোতে ছবি এঁকেছেন। তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে এলাকার জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায় কলকাতায় গিয়ে ছবি আঁকা শেখার স্বপ্নপূরণে এগিয়ে আসেন।

কলকাতায় শিল্পযাত্রা

১৯৩৮ সালে তিনি কলকাতায় পা রাখেন। ১৯৪১ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সহায়তায় ভর্তি হন কলকাতা আর্ট স্কুলে। কিন্তু তিন বছরের মধ্যে একাডেমিক শৃঙ্খল তাঁকে বেঁধে রাখতে পারেনি। শিল্পচর্চায় স্বাধীনতা ছিল তাঁর মূল বিশ্বাস। তাই একদিন তিনি বেরিয়ে পড়েন নিজের পথে—যেখানে পাঠ্যপুস্তকের চেয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতাই হয়ে ওঠে বড় শিক্ষক।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ঘুরে বেড়ানো জীবন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় উপমহাদেশের ছোট-বড় শহরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ইংরেজ ও আমেরিকান সৈন্যদের প্রতিকৃতি এঁকে ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। এই ভ্রমণ তাঁর দৃষ্টিকে প্রসারিত করে, মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবন ও প্রকৃতিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ দেয়।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

তিনি ছিলেন প্রথম এশীয় শিল্পী, যার আঁকা ছবি পাবলো পিকাসো, সালভাদর দালি, পল ক্লি প্রমুখ বিশ্বখ্যাত শিল্পীর সঙ্গে একই প্রদর্শনীতে স্থান পায়। তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতি যেমন বেড়েছে, তেমনি তিনি রয়ে গেছেন বাংলার গ্রামীণ বাস্তবতায় গভীরভাবে প্রোথিত।

চিত্রশৈলী ও বিষয়বস্তু

সুলতানের ছবিতে প্রায়শই দেখা যায় গাঢ় রঙ, বলিষ্ঠ আকার, শক্তিমান কৃষক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুপম মেলবন্ধন। তাঁর কৃষক-প্রধান শিল্পকর্মে শ্রমজীবী মানুষের শরীরকে দেখানো হয়েছে প্রায় ভাস্কর্যের মতো দৃঢ় ও শক্তিশালী রূপে—যেন বাংলার মাটিরই প্রতিরূপ।

‘আদম সুরত’ ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার

বাংলাদেশের প্রথম প্রামাণ্যচিত্র আদম সুরত নির্মিত হয় তাঁকে নিয়েই। ছবিটি তাঁর জীবনদর্শন ও শিল্পীচেতনার গভীরে নিয়ে যায়। যদিও খ্যাতি ও পুরস্কার তাঁর জীবনে এসেছে, তবু তিনি থেকেছেন সরল, নিভৃত, ও গ্রামীণ জীবনের সঙ্গী।

শেষ জীবন ও প্রভাব

নড়াইলের নিজ বাড়িতেই জীবনের শেষ দিনগুলো কাটান। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রেখে যান এক অনন্য উত্তরাধিকার—যা শুধু শিল্পকলার নয়, বরং বাংলার আত্মপরিচয়ের অংশ।

এস. এম. সুলতান আমাদের শিখিয়েছেন, শিল্প মানে কেবল নান্দনিকতা নয়—এটি মানুষের আত্মা, পরিশ্রম ও সংস্কৃতির প্রতিফলন। তাঁর তুলি বাংলার প্রাণকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিয়েছে, যা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে যাবে।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট