চিকিৎসা নয়, চলছে বাণিজ্য—সরকারি হাসপাতালের ভয়াবহ চিত্র
হাসান মাহমুদ
ঢাকা, ১৪ আগস্ট ২০২৫
রাজধানীর অন্যতম বৃহত্তম সরকারি জেনারেল হাসপাতাল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চরম অব্যবস্থাপনা, নোংরামি ও অনিয়মের কারণে সাধারণ রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। জরাজীর্ণ বেড, ভাঙা দরজা-জানালা, স্যাঁতসেঁতে ফ্লোর, সর্বত্র ময়লার স্তুপ ও তীব্র দুর্গন্ধ যেন হাসপাতালের স্থায়ী দৃশ্য।
প্রবেশ গেইটেই হকারদের দখল
হাসপাতালের প্রধান ফটক পেরোতেই চোখে পড়ে নানা পণ্যের দোকান ও হকারদের ভিড়—বিড়ি-সিগারেট থেকে শুরু করে খাবার পর্যন্ত সব মিলছে এখানে। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতাল প্রশাসন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার সদস্যদের ম্যানেজ করেই এসব অবৈধ দোকানপাট চলছে। হাসপাতাল চত্বরে প্রকাশ্যে ধূমপান হচ্ছে, কোনো বাধা ছাড়াই।
ইমার্জেন্সি সেবায় অনিয়মের ছড়াছড়ি
ইমার্জেন্সি অংশে ঢোকার পথে নাকে আসে আবর্জনার তীব্র গন্ধ। ভেতরে আউটসোর্সিং কর্মীদের হুইলচেয়ার ও ট্রলিতে বসে থাকতে দেখা যায়। রোগী পরিবহনে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত নিতে হয়। গতকাল এক রোগীর স্বজন জানান, জরুরি ভিত্তিতে ভর্তি করানোর পরও ডিউটি ডাক্তার বলেন বেড খালি নেই, ফ্লোরে চিকিৎসা নিতে হবে। পরে এক ওয়ার্ড বয়ের সহায়তায় ১,০০০ টাকার বিনিময়ে পাচঁতলার একটি বেড ম্যানেজ করতে সক্ষম হন তারা।
টাকার বিনিময়েই সেবা
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক হাসপাতাল কর্মী জানান, “এখানে সব সেবাই টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায়। ডাক্তার বললেও বেড মেলে না, কিন্তু প্রভাবশালী ওয়ার্ড বয়ের কাছে টাকা দিলে মুহূর্তে বেড হয়ে যায়।”
অমানবিক পরিবেশ
বিভিন্ন ফ্লোরে ঘুরে দেখা গেছে—বিছানা ও বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট চায়না তেলাপোকা, বেওয়ারিশ কুকুর ও বেড়াল। পাচঁতলার ৫২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে বারান্দায় শুয়ে থাকা এক রোগীর পাশে ঘুমিয়ে ছিল একটি কুকুর। রোগীর বেডের পাশেও কুকুর খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে।
টয়লেট ও সিঁড়ির ভয়াবহ অবস্থা
ওয়ার্ডের টয়লেটগুলোতে উপচে পড়ছে ময়লা ও মলমূত্র, যেখান থেকে ছড়াচ্ছে অসহনীয় দুর্গন্ধ। দক্ষিণ পাশের সিঁড়ি দিয়ে নামলেই শ্বাসরুদ্ধকর গন্ধে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। অন্ধকার সিঁড়িতে ঘুমিয়ে আছে কয়েকজন ভবঘুরে শিশু।
নার্স ও আয়াদের দুর্ব্যবহার
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, অধিকাংশ আয়া ও ওয়ার্ড বয় টাকা ছাড়া কোনো কাজ করে না। রাতে নার্স ডাকতে গেলে খারাপ ব্যবহার করে। সরকারি খরচে চিকিৎসার কথা থাকলেও নাপা ছাড়া প্রায় কোনো ঔষধই মজুদে পাওয়া যায় না।
দরিদ্র রোগীদের শেষ আশ্রয়
রোগীর স্বজনরা জানান, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন। কিন্তু এখানে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কারণে চিকিৎসা পাওয়া ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।