1. dailyrodrodipto@gmail.com : রৌদ্রদীপ্ত : রৌদ্রদীপ্ত
  2. info@www.newsbddailyrodrodipto.online : রৌদ্রদীপ্ত :
রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৪২ পূর্বাহ্ন

নাটোরে পাট চাষের পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে

  • প্রকাশিত: বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫
  • ১৩৭ বার পড়া হয়েছে

রাশেদ কবীর: গত কয়েক বছর ধরে বাজারে পাটের চাহিদা বৃদ্ধিসহ ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় কৃষকদের মাঝে পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে। ফলে কৃষকরা সহজেই জমি এবং জলাশয় কিংবা পাড় সংলগ্ন স্থানগুলোতেও পাট চাষ করছে। সরজমিনে বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, জমিতে দন্ডায়মান চির সবুজ পাট, কাটা গাছ ভেজানো, পাটের আঁশ ছড়ানো, পাট শুকানো, পাটকাঠির পালা নিয়ে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। গ্রামীণ জনপদের সর্বত্রই এখন চলছে পাট উৎসব। ফিরে আসছে সেই সোনালী আঁশের দিন।

 

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় ১৪ হাজার ৩৩৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৫ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছর জেলায় পাটের আবাদি জমি ছিল ১৪ হাজার ৩৬৬ হেক্টর। চলতি বছর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলায় সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। লালপুর উপজেলায় তিন হাজার হেক্টর, গুরুদাসপুরে দুই হাজার ২০০ হেক্টর, নাটোর সদরে এক হাজার ৯০২ হেক্টর, নলডাঙ্গায় এক হাজার ২৬৩ হেক্টর, সিংড়ায় এক হাজার ১৮৫ হেক্টর এবং বাগাতিপাড়া উপজেলায় ৬৪০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। গত বছর জেলায় এক লাখ ৩৮ হাজার ১৫৬ বেল পাট উৎপাদন হয়েছিল। চলতি বছর এক লাখ ৫৭ হাজার ৭৫৫ বেল পাট উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সিংড়া উপজেলার লাড়–য়া গ্রামের কয়েক কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে এবং সংলগ্ন বিল ও ডোবাতে শতাধিক নারী-পুরুষ পাট পঁচানো ও আঁশ ছড়ানোর কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। এই কাজে মহিলাদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মত। তারা মূলতঃ পানিতে না নেমেই পঁচানো পাট পাড়ে তুলে এনে আঁশ ছড়াচ্ছেন। আঁশ ছড়ানো কাজে নিয়োজিত মর্জিনা খাতুন জানান, এই কাজে পুরুষের মজুরি বেশি। তাদের ৩০০ টাকা আর আমাদের ২০০ টাকা। হাজেরা খাতুন জানান, তিনি পাট কাঠি নেয়ার শর্তে আঁশ ছড়ানোর কাজ করছেন। রাস্তার দু’ধারে বাঁশের আড় টানিয়ে, কালভার্টের রেলিং কিংবা গৃহস্থ বাড়ির চারপাশে সর্বত্রই চলছে পাট শুকানোর কাজ। এসব এলাকা জুড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে পাটকাঠির বোঝা সমৃদ্ধির জানান দিচ্ছে। চারিদিকে যেন শ্বেতসুন্দর পাট উৎসব। লাড়–য়া এলাকার কৃষক আনছার আলী তার ছয় বিঘা জমিতে এবার পাট চাষ করেছেন। লাড়–য়া বিলে পাট ছড়ানো শ্রমিকদের কাজ তদারককারী আনছার আলী জানান, এবার বৃষ্টি বেশি হওয়ায় পাট পঁচানোর সুবিধা হয়েছে। এবার বিঘা প্রতি আট মণ করে ফলন পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। নাটোর সদর উপজেলার বড়হরিশপুর ইউনিয়ন ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাবুল হোসেন জানান, এবার এলাকায় আশানুরূপ পাট চাষ হয়েছে। গড় উৎপাদন বিঘা প্রতি সাড়ে সাত মণ। এই ব্লকের ফতেঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক মনু মিয়া জানান, তিনি বিঘায় নয় মণ পাট পেয়েছেন। সিংড়া উপজেলার বড়শাঁঐল গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, জমিতে গম বা ডাল উঠে যাওয়ার পর আমন মৌসুমের আগে পাট চাষ করা হলে জমি অনাবাদি থাকে না। চৈত্র মাসের মধ্যে পাট বীজ বোনা হলে আগাম পাট কেটে খুব সহজেই আমন মৌসুম ধরা যায়।

 

 

নাটোরের আদর্শ কৃষক হাসান আলী জানান, বিগত কয়েক বছরে কৃষকদের মাঝে পাট চাষে বেশ ভাল আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাজারের সম্প্রসারণ ঘটছে। এর ফলে দরও ভাল পাওয়া যাচ্ছে। নাটোরের প্রসিদ্ধ পাটের হাট নলডাঙ্গা, গুরুদাসপুরের নাজিরপুর, নাটোর সদরের তেবাড়িয়া এবং সিংড়ার হাতিয়ান্দহ, হাট ঘুরে দেখা যায়, আগাম ওঠা পাট হাটে বিপণন হচ্ছে। হাতিয়ান্দহ হাটে পাট বিক্রি করতে আসা সোলেমান মিয়া জানান, গত হাটে দেড় হাজার টাকা মণ দরে জমির পাট বিক্রি করেছেন।

 

পাট ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম মেম্বর জানান, এবার হাটে পাটের দর ব্যবসায়ী ও কৃষক-উভয়ের জন্যই ভাল। হাটে পাটের দর দেড় হাজার টাকা থেকে ষোলশ’ কুড়ি টাকা পর্যন্ত। হাটে রমিজুলের আড়তে পাট কিনতে ট্রাক নিয়ে এসেছেন বগুড়ার ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান। তিনি জানান, পাট কিনে যশোরের নওয়াপাড়ায় পাঠাবেন। নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আলহাজ উদ্দিন আহাম্মদ জানান, পরিবেশ বান্ধব বলেই পাটের বহুমুখী ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে দেশে ও বিদেশে পাটের চাহিদা বাড়ছে। বাড়তি মূল্য পাওয়ার কারণে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় পাট চাষে তারাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি জ্ঞানে কৃষকদের এগিয়ে নিতে কৃষি বিভাগ সবসময় কৃষকদের পাশে থাকবে।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট