৩৬ জুলাই: বাংলাদেশের গণতন্ত্রের এক নতুন ইতিহাস
হাসান মাহমুদ
ঢাকা, ০৫ আগস্ট ২০২৫
বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে “৩৬ জুলাই” নামে পরিচিত একটি ব্যতিক্রমী দিনকে কেন্দ্র করে। এই দিনটি শুধু একটি তারিখ নয়, বরং একটি প্রতীক—বৈষম্য, অন্যায় এবং স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলনের বিজয়ের দিন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, যেটিকে আন্দোলনকারীরা “৩৬ জুলাই” বলে অভিহিত করেছেন, সেই দিন দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের নেপথ্যে রয়েছে এক দীর্ঘ সংগ্রাম, রক্তক্ষয়ী আন্দোলন এবং জনগণের অদম্য চেতনা।
কোটা রায় এবং জনরোষের সূত্রপাত
৫ জুন ২০২৪ — হাইকোর্টের রায়ে সরকারি চাকরিতে বিতর্কিত কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা হয়। এই রায়ের প্রতিবাদে ছাত্রসমাজ ও সাধারণ নাগরিকেরা জেগে ওঠে। রাজপথে নামে “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।”
১৬ জুলাই আন্দোলনে প্রথম প্রাণহানি ঘটে; নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে বেশ কয়েকজন ছাত্র নিহত হন। এই নির্মম ঘটনায় দেশজুড়ে শোক ও ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে ২১ জুলাই আপিল বিভাগ কোটা ব্যবস্থার রায় বাতিল করলেও, আন্দোলন থেমে যায়নি। এই হত্যাকাণ্ডকে “জুলাই গণহত্যা” নামে অভিহিত করে আন্দোলনকারীরা।
মাস গোনার নতুন ইতিহাস
দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত “জুলাই মাস” চলবে — এমন ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনকারীরা সময়কে নিজস্বভাবে সংজ্ঞায়িত করতে শুরু করেন। ১ আগস্ট তারা “৩২ জুলাই”, ৪ আগস্ট “৩৫ জুলাই”, এবং ৫ আগস্ট “৩৬ জুলাই” হিসেবে ঘোষণা দেন।
এই প্রতীকী পদক্ষেপ শুধু সময়ের বিরুদ্ধে নয়, ছিল একপ্রকার রাজনৈতিক প্রতিরোধ। তারা বলেছিলেন, “আমরা অন্যায়-অবিচার যতদিন চলবে, ততদিন জুলাই মাসই চলতে দেব।”
গণ-অভ্যুত্থান ও শেখ হাসিনার পদত্যাগ
৩৫ জুলাই (৪ আগস্ট) থেকে শুরু হয় দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস, শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমে আসে। ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) “মার্চ টু ঢাকা” কর্মসূচিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নামে রাজধানীতে।
চূড়ান্ত গণ-চাপের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং দেশ ত্যাগ করেন। আন্দোলনকারীদের মতে, এটি বাংলাদেশের “দ্বিতীয় স্বাধীনতা।”
“৩৬ জুলাই” – এক প্রতীকী স্বাধীনতা
আজ ৩৬ জুলাই বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে শুধু একটি অতিরিক্ত দিন নয়; এটি মানুষের অধিকার, সমতার দাবি এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিজয়ের প্রতীক।
এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো শাসন টিকিয়ে রাখা যায় না।