খাঁজকাটা
ইকবাল জিল্লুল মজিদ
সমাজটা আজ খাঁজকাটা আয়নার মতো,
প্রতিফলনে ভাঙাচোরা মুখ—
কোথাও আশার আলো, কোথাও ঘন অন্ধকার।
রাজনীতি—
একদিন ছিল নেতৃত্বের অঙ্গীকার,
আজ তা ভাঙা প্রতিশ্রুতির গহ্বর,
ক্ষমতার কোলাহলে হারিয়ে গেছে
মানুষের সত্যিকারের দাবি।
দক্ষ নেতৃত্বের অভাব—
যেন দিকনির্দেশহীন নৌকা,
ঝড়ে টলমল করে,
কোনো নাবিক নেই হাল ধরার।
অক্ষমতার বোঝা চাপিয়ে দেয়
প্রজন্মের কাঁধে,
তবুও কেউ বলে না—
“আমরা পথ হারিয়েছি।”
অবক্ষয় ছড়ায় নিঃশব্দে,
নৈতিকতা পচে যায় প্রতিদিনের রোদে-বৃষ্টিতে।
মানুষ মাপা হয় টাকার ওজন দিয়ে,
গুণ, মর্যাদা, মানবতা—
সব কিছুই নিলামে বিক্রি হয়,
যেন এ সমাজ এক অদৃশ্য বাজার।
দুর্নীতি—
এখন আর কোনো অপরাধ নয়,
বরং বুদ্ধিমত্তার নাম,
চাতুর্যের পরিচয়।
যে যত বেশি লুটে,
সে তত বেশি সম্মান পায়,
আর সৎ মানুষরা
হয় ধুলোমাখা কাগজের মতো উপেক্ষিত।
বৈষম্যের আগুন—
জ্বলে ওঠে প্রতিটি গলিতে।
ধনী প্রাসাদে উল্লাস করে,
গরিব রুটি মাপে ভগ্নাংশে।
একপাশে অতি ভোগ,
অন্যপাশে অন্নহীন শিশুদের কান্না—
এই খাঁজকাটা বাস্তবতাই
আমাদের দিনলিপি।
নারী—
আজও শিকার,
নির্যাতনের শ্বাসরোধী অন্ধকারে।
তার চোখে আশ্রয়ের খোঁজ নেই,
কারণ আশ্রয়দাতারাও
অধিকাংশ সময়
অত্যাচারীর সঙ্গী।
সমাজটা দাঁড়িয়ে আছে
এক বিশাল দেয়ালের সামনে,
দেয়ালে খাঁজকাটা দাগ—
অন্যায়, লোভ, ক্ষমতা, বৈষম্য, সহিংসতা।
তবুও কিছু দাগের ফাঁকে
একটি ক্ষুদ্র আলোর রেখা—
আশা, পরিবর্তন, পুনর্জন্ম।
কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—
কে আসবে সেই আলোর দূত হয়ে?
কে ভরাট করবে এই খাঁজকাটা সমাজের ফাঁকফোকর?
কে লিখবে নতুন ইতিহাস,
যেখানে থাকবে না—
অবক্ষয়, দুর্নীতি, বৈষম্য আর নারীর আর্তনাদ,
বরং থাকবে
ন্যায়, নেতৃত্ব, ভালোবাসা আর সমতার প্রতিশ্রুতি?