
স্বাধীনতা তোমাকে বলছি
সঙ্গীতা কর
স্বাধীনতা তোমাকে বলছি
ওই যে শিশুটির গায়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছো
যে মনের আনন্দে ধুলো মাখছে
স্কুলের ব্যাগ ছেড়ে পিঠে তুলে নিচ্ছে বোঝা
পারলে ওর গায়ের কাছ থেকে একটু সরে দাঁড়াও
ওকে বন্দি করো স্কুলে।
স্বাধীনতা তোমাকে বলছি
ওই যে মেয়েটি রাতকে দিনের আলো করে নিয়েছে
নির্ঘুম রাত্রে যে জেগে জেগে কয়লা ভাঙছে
পারলে ওর থেকে কেড়ে নাও ঘুমহীনতা
সরে দাঁড়াও তুমি আরো অনেক দূরে।
স্বাধীনতা তোমাকে বলছি
যে বৃদ্ধা মা রাস্তায় বসে ভিজে চলেছে অঝোর ধারায়
তার ভিজে যাওয়ার স্বাধীনতা একটু কেড়ে নাও
তার বুকে এঁকে দাও অন্য একজনের স্নেহের পরাধীনতা।
স্বাধীনতা তোমাকে বলছি
যে পিতা বৃদ্ধাশ্রমের প্রাঙ্গনে বসে আছে
পারলে তাকে একটা গৃহে বন্দি করো
তার মাথার নিচে আপনজনের ছাদ দিয়ে বলো
এই নাও তোমাকে দিলাম ভরসার পরাধীনতা।
স্বাধীনতা তোমাকে বলছি
যে যুবকটি চাকরিহীন অবস্থায় ঘুরে চলেছে যত্রতত্র
ওর থেকে কেড়ে নাও নিষ্ফল ঘোরাঘুরির স্বাধীনতা
ওকে একটু স্থিতু করো
হাতের কাছে একটা কাজ দিয়ে বলো
নে অভুক্ত পেটের খাবার জোগাড় করে নে।
স্বাধীনতা তোমাকে বলছি
যে রাষ্ট্রনায়ক অন্ধ সেজে বসে থাকে
তার চোখে এক বিন্দু আলো জ্বালিয়ে দাও
তাকে দেখতে দাও পৃথিবীকে
তাকে বুঝতে দাও মানুষকে
দূরে সরো একনায়ক তন্ত্রের নাগপাশ থেকে,
এসে দাঁড়াও উচ্চবিত্ত আর নিম্নবিত্তের মাঝামাঝি
এসে দাঁড়াও সহায় আর অসহায়ের মাঝামাঝি
এসে দাঁড়াও নবীন আর প্রবীণের মাঝামাঝি
এসে দাঁড়াও শাসক আর জনগণের মাঝামাঝি
তুমি দাঁড়াও তোমার নিজস্বতায় একেবারে সমানুপাতে
তোমাকে দেখতে চাই সাম্যবাদের চোখে।
Like this:
Like Loading...
Related